সেঞ্চুরি হাঁকিয়ে ফের ৮০’র ঘরে বেগুন; সয়াবিনে কাটছে সংকট

বাড়তি দামে বেগুন, লেবু কিনতে হচ্ছে ১০০ টাকা হালি। আগের তুলনায় কিছুটা স্বাভাবিক সয়াবিন তেলের বাজার।

Last modified: May 3, 2025

সেঞ্চুরি হাঁকিয়ে ফের ৮০’র ঘরে বেগুন

রাজধানীর বাজারে রমজানের প্রথম দিন সেঞ্চুরি করেছিল বেগুন। যদিও তা এখন কিছুটা কমে এসেছে। সেঞ্চুরি হাঁকিয়ে ফের ৮০’র ঘরে বেগুন
অন্যদিকে লেবুর দাম এখনও বাড়তি আছে প্রতি হালি লেবু বিক্রি হচ্ছে  ৮০ থেকে ১০০ টাকায়।

তবে দুই তিনটি ছাড়া অন্যান্য সব ধরনের সবজির দাম ক্রেতাদের সহনীয় পর্যায়ে আছে বাজারে।

শুক্রবার (৭ মার্চ) রাজধানীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে সবজির এমন দামের এমন চিত্র দেখা গেছে।

আজকের বাজারে ঝিঙা প্রতি কেজি ৬০ টাকা,  করলা ১২০ টাকা, ক্ষীরা ৫০ টাকা, শসা ৪০ টাকা, পটল ১২০ টাকা, পেঁপে ৪০ টাকা কেজি করে বিক্রি হচ্ছে।

ফুল কপি প্রতি পিস ৪০ টাকা, বাধা কপি ৩০, গাজর প্রতি কেজি ৩০ টাকা, কাঁচা কলা প্রতি হালি ৪০ টাকা,
ঢেঁড়স ১০০ টাকা, শিম  ৩০ থেকে ৪০ টাকা, মিষ্টি কুমড়া ৩০ টাকা, টমেটো ২০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে।
জালি কুমড়া প্রতি পিস ৫০ থেকে ৬০ টাকায়, আলু প্রতি কেজি ৩০ টাকা, লাউ প্রতি পিস ৫০ থেকে ৭০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

এছাড়া কাঁচা মরিচ প্রতি কেজি ৮০ থেকে ১০০ টাকা,  ভালো লেবু প্রতি হালি ৮০ থেকে ১০০ টাকায় এবং ধনেপাতা প্রতি কেজি ৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

সাপ্তাহিক ছুটির দিনে রাজধানীর শান্তিনগর বাজারে বাজার করতে আসা বেসরকারি চাকরিজীবী খোরশেদ আলম। তিনি বলেন,

‘আজকের বাজারে দাম তুলনামূলক কমই আছে তবে নির্দিষ্ট দুই চারটি সবজির দাম অতিরিক্ত বেশি। প্রতি রমজান মাসেই বেগুন, লেবুর দাম কোনোভাবেই নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারেনা কেউ। আজও বেগুনের দাম অতিরিক্ত বেশি, এছাড়া লেবু কিনতে হচ্ছে ১০০ টাকা হালি।

প্রতিবছর বোঝাই যায় এগুলো জিনিসের দাম বাড়বে রমজানে, তাহলে কেন আগে থেকে এসব নিয়ন্ত্রণে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয় না? অন্যান্য দেশে শুনেছি রমজান আসলে সমস্ত কিছুর দাম কমে যায়, তবে আমাদের দেশে তার উল্টোটা ঘটে।’

রাজধানীর মালিবাগ বাজারের আরেক ক্রেতা রফিকুজ্জামান বলেন,

‘বাজারে বেগুন, লেবু, পটল, ঢেঁড়স, করলা‌ ছাড়া অন্যান্য সবধরনের সবজির দাম এখনো কম রয়েছে। অন্য সবজির দাম যে কম সেজন্য সাধুবাদ জানাই, তবে বেগুন লেবুর দাম এত বেশি তার জন্য প্রতিবাদ জানাতে হয়। বাকি ওই সবজিগুলো এখন মৌসুম না হয় দাম বেশি, সেটা মেনে নিলাম। কিন্তু লেবু বেগুন এত দাম এ বিষয়ে কেন আগে থেকে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হলো না।

রমজানে যেসব জিনিসের দাম বৃদ্ধি পায় সেগুলোর বিষয়ে আগে থেকেই সংশ্লিষ্টদের বাজার মনিটরিং করা উচিত ছিল। তবে বাজারে অন্য সবজির সহনীয় দামে আমি সাধারণ ক্রেতা হিসেবে বর্তমানে সন্তুষ্ট।’

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ক্রেতা বলেন,

‘আমাদের এ দেশে রাতারাতি সব বদলে যায়। বদলায় না শুধু ক্রেতাদের অসহায় অবস্থা। নিউজ হবে, কথা হবে। কিন্তু রমজান এলেই চওড়া দামে কিছু পণ্য বিক্রি হবেই হবে। এটা সেটা করে বিভিন্ন জিনিষের দাম বাড়িয়ে আমাদের ভোগান্তি না করে আগে থেকেই তদারকি করে সব স্থিতিশীল রাখার ব্যবস্থা করা উচিত।’

সবজির দাম বিষয়ে রামপুরা বাজারের সবজি বিক্রেতা আফজাল ইসলাম বলেন,

‘এখন মৌসুম নয় এমন তিন-চার আইটেমের সবজির দাম বর্তমানে বেশি। তবে এখন সব ধরনের সবজির দামই কম যাচ্ছে। যেসব সবজির মৌসুম না সেগুলো ১০০ থেকে ১২০ টাকা প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে। বাকি সব সবজি বিশ থেকে ৫০ টাকার মধ্যে রয়েছে।

রমজানের জন্য শুধুমাত্র বেগুন আর লেবুর দাম বেশি। টমেটো মাত্র ২০ টাকা কেজি বাকি অন্য সব সবজি গুলো ৫০ টাকার মধ্যে। শুধুমাত্র বেগুন ৮০ টাকা কেজি আর লেবু প্রতিহালি ৮০ থেকে ১০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।’

আশিকুর নামে আরেক বিক্রেতা বলেন, ‘বেগুনি ও শরবতের জন্য লম্বা বেগুন ও লেবুর চাহিদা বেশি। যার জন্য দামও বেশি। আর অন্য শাকসবজির দাম বেশি বাড়েনি। এখনও বাজারে সরবরাহ ভালোই।

শীতকালীন সবজিও শেষ হয়নি। তাই কয়েকটি সবজি ছাড়া অধিকাংশ গুলোর দামই ক্রেতার নাগালের মধ্যে রয়েছে বলেও মন্তব্য করেই এই সবজি বিক্রেতা।’

অন্যদিকে, পুরোপুরি সংকট না কাটলেও আগের তুলনায় কিছুটা স্বাভাবিক হয়েছে বোতলজাত সয়াবিন তেলের বাজার।

অধিকাংশ দোকানেই এখন কম-বেশি বিভিন্ন কোম্পানির সয়াবিন তেলের বোতল পাওয়া যাচ্ছে।
তবে এখনও বেশিরভাগ জায়গায় দৃশ্যমান হয়নি সয়াবিনের ৫ লিটারের বোতল।

শুক্রবার (৭ মার্চ) সকালে রাজধানীর মিরপুরের মানিকদী বাজার, মাটিকাটা বাজার এবং ইসিবি চত্বরসহ আশপাশের বিভিন্ন এলাকায় এমন চিত্রই দেখা গেছে।

বিভিন্ন মুদি দোকান, ডিপার্টমেন্টাল স্টোর, সুপারশপ ঘুরে দেখা যায়, অধিকাংশ জায়গায় ৫০০ মিলিগ্রাম, ১ ও ২ লিটার সয়াবিন তেলের বোতল কম-বেশি পাওয়া যাচ্ছে।

গত কয়েক সপ্তাহ ধরে বোতলজাত সয়াবিন তেলের ব্ল্যাকআউটের মতো যে অবস্থা তৈরি হয়েছিল সেটি এখন তেমন নেই।
প্রায় দোকানগুলোতেই ক্রেতারা সয়াবিন তেলের বোতল চাইলে পাচ্ছেন। তবে এখনও অদৃশ্য ৫ লিটারের বোতল।

দোকানিরা জানান, বোতলজাত সয়াবিন তেলের সরবরাহ আগের তুলনায় কিছুটা স্বাভাবিক হচ্ছে। পরিবেশকরা চাহিদা অনুযায়ী তেল সরবরাহ আগের তুলনায় বাড়িয়েছেন।

ফলে, তেলের বোতল আগের তুলনায় মার্কেটে বেড়েছে।

তবে এখনও ৫ লিটারের সয়াবিন তেলের বোতল বেশি পাওয়া যাচ্ছে না। নিয়মিত পরিবেশকদের চাহিদা জানানোর পরও তারা কালেভদ্রে সরবরাহ করছেন।
কয়েকদিন পরপর ২-৫টি করে বোতল দিচ্ছেন। সেগুলো আবার ক্রেতারা সাথে সাথেই কিনে নিয়ে যান।

আব্দুল হান্নান নামের এক দোকানি বলেন, ১ ও ২ লিটারের সয়াবিন তেলের বোতল পাওয়া যাচ্ছে।

তবে এক্ষেত্রে সমস্যা হচ্ছে, বোতল দেখলেই একজন ক্রেতা ২-৩টা করে কিনতে চাচ্ছেন।না দিলে আবার রাগ করছেন।
এখন সরবরাহ যেহেতু আগের তুলনায় বেড়েছে সে হিসেবে আশা করা যায় আগামী কয়েকদিনের মধ্যে আরও স্বাভাবিক হবে।

শরিফুল ইসলাম নামের আরেক দোকানি বলেন,

‘গত কয়েক সপ্তাহ ধরে বোতলজাত সয়াবিন তেল একেবারেই সরবরাহ বন্ধ ছিল। প্রায় দোকানগুলোই সয়াবিন তেল শূন্য ছিল। গত ২ দিন ধরে আবারও সরবরাহ বাড়তে শুরু করেছে। এখন কিছুটা স্বাভাবিক হয়েছে। আশা করছি, এই সরবরাহ বজায় থাকলে দ্রুতই বোতলজাত সয়াবিনের বাজার আরও স্বাভাবিক হবে।’

এদিকে ক্রেতারা বলছেন, শুধু রোজা উপলক্ষ্যে অসাধু ব্যবসায়ীরা পরিকল্পিতভাবে দাম বাড়াতে সয়াবিন তেলের কৃত্রিম সংকট তৈরি করেছেন। যা ভোক্তাদের মধ্যে যথেষ্ট উদ্বেগ ও ভোগান্তির সৃষ্টি করেছে।

এ সংকটের প্রধান কারণ হিসেবে বাজার বিশ্লেষকরা সিন্ডিকেটের কারসাজি, বিশ্ববাজারে তেলের দাম বৃদ্ধি এবং সরবরাহ ব্যবস্থার দুর্বলতাকেও দায়ী করেছেন।

নুরুল ইসলাম নামে এক ক্রেতা বলেন,

‘আগেভাগেই বাজার মনিটরিং জোরদার করা দরকার। যাতে অসাধু ব্যবসায়ীরা অতিরিক্ত মূল্য আদায় বা কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করতে না পারেন। গত কয়েকদিনের তুলনায় এখন বোতলজাত সয়াবিন তেল পাওয়া যাচ্ছে। দামও আগের মতোই।’

কনজুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) কেন্দ্রীয় ভাইস প্রেসিডেন্ট এস এম নাজের হোসাইন বলেন,

‘এ বিষয়ে সরকারের পদক্ষেপ আরও জোরালো হওয়ার দরকার ছিল।’

সিন্ডিকেট চিহ্নিত করতে তারা ব্যর্থ হয়েছে। তারপরও আশার কথা হচ্ছে, এখন সংকট কাটিয়ে আবারও বাজারে বোতলজাত তেলের সরবরাহ বাড়তে শুরু করেছে।
সরকারের উচিত হবে, এই সরবরাহের ধারা যেন বজায় থাকে সেদিকে খেয়াল রাখা।

এর আগে সোমবার (৩ মার্চ) রাজধানীর মোহাম্মদপুরে কাঁচাবাজার পরিদর্শন শেষে বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন বলেছিলেন,

‘আগামী দুইদিনের মধ্যে সয়াবিন তেলের সরবরাহ স্বাভাবিক হবে।’

তিনি আরও বলেন,

‘সয়াবিন তেল বেশি দামে যেমন বিক্রি হচ্ছে, তেমনি পামওয়েল সরকার নির্ধারিত দাম থেকে ২৫ টাকা কমে বিক্রি হচ্ছে। আমাদের মোট ভোজ্যতেলের ৬০ শতাংশ পামওয়েল। বাজারে তেলের দাম একই সঙ্গে কমেছে এবং বেড়েছে। সয়াবিন তেলের দামও কমে আসবে।’

Post date: March 8, 2025

Last modified: May 3, 2025