আর্থিকভাবে সহায়তা পেল দুর্বল তিন ব্যাংক

Last modified: November 20, 2024

আর্থিক অনিয়মে দুর্বল হ‌য়ে পড়া বেসরকারি তিন বাণিজ্যিক ব্যাংককে ২৬৫ কোটি টাকা ধার হিসেবে আর্থিক সহায়তা দেওয়া হয়েছে। অর্থ সহায়তা পাওয়া ব্যাংকগুলো হলো: ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক, ন্যাশনাল ব্যাংক ও এক্সিম ব্যাংক।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গ্যারান্টি বা নিশ্চয়তায় এ ধার দিয়েছে অতিরিক্ত তারল্য থাকা সবল ৪ ব্যাংক। যেসব ব্যাংক সহায়তা করেছে তারা হলো— ডাচ্‌–বাংলা, সিটি ব্যাংক, ইস্টার্ন ব্যাংক ও পূবালী ব্যাংক। ২৬৫ কোটি টাকার মধ্যে ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক আর্থিক সহায়তা পেয়েছে ৫০ কোটি টাকা, ন্যাশনাল ব্যাংক পেয়েছে ৬৫ কোটি টাকা এবং এক্সিম ব্যাংক পেয়েছে ১৫০ কোটি টাকা।

বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র হুসনে আরা শিখা এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। এর আগে ১১ নভেম্বর বাংলাদেশ ব্যাংকে ১৭টি বাণিজ্যিক ব্যাংকের সঙ্গে বৈঠক করেন গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর। সেখানে তিনি দুর্বল হয়ে পড়া ব্যাংকগুলোকে আরও বেশি অর্থ সহায়তা দি‌তে সবল ব্যাংকগুলোকে আহ্বান জা‌নান। বৈঠকে ছিলেন রাষ্ট্রায়ত্ত সোনালী, রূপালী, অগ্রণী ও জনতা ব্যাংকের এমডি এবং বেসরকা‌রি খা‌তের ব্র্যাক ব্যাংক, ইস্টার্ণ, সিটি ব্যাংক, মিউচুয়াল ট্রাস্ট, ঢাকা ব্যাংক, ডাচ্‌–বাংলা, পূবালী, প্রাইম ব্যাংক, এনসিসি ব্যাংক, মার্কেন্টাইল ব্যাংক, প্রিমিয়ার ব্যাংক, যমুনা, সাউথ ইস্ট ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহীরা।

গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনার সরকারের পতনের পর অনিয়ম ও দুর্নীতিতে জর্জরিত ব্যাংকগুলোর পরিচালনা পর্ষদ পুনর্গঠন করে বাংলাদেশ ব্যাংক। গত ২০ আগস্ট থেকে এ পর্যন্ত ১১টি ব্যাংকের পর্ষদে পরিবর্তন এনেছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা। যার ম‌ধ্যে আটটি ব্যাংকের নিয়ন্ত্রণে ছিল এস আলম গ্রুপ। এগুলো হলো— ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ, ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক, আল আরাফা ইসলামী ব্যাংক, সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক, গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক ও ইউনিয়ন ব্যাংক। এ ছাড়া, বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংক ও ন্যাশনাল ব্যাংকও নিয়ন্ত্রণে নিয়েছিল তারা। এই ৮টি ব্যাংক তারল্য সংকটে ভুগছে। তবে এর ম‌ধ্যে ৬টি ব্যাংকের পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে তাদের অনেক শাখায় লেনদেন করার মতো নগদ টাকা নেই, লেনদেন প্রায় বন্ধ হয়ে গেছে। আমানতকারীদের চাপে শাখা ব্যবস্থাপকসহ ব্যাংকগুলোর কর্মকর্তারা প্রতিদিনই অপ্রীতিকর পরিস্থিতির মুখোমুখি হচ্ছেন।

এমন পরিস্থিতিতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক আন্তঃব্যাংক মার্কেট থেকে ভালো ব্যাংকগুলো থেকে দুর্বল ব্যাংকগুলোর জন্য তারল্য ব্যবস্থা করে দিচ্ছে। এক্ষেত্রে দুর্বল ব্যাংকগুলোর পক্ষে গ্যারান্টি দিচ্ছে বাংলাদেশ ব্যাংক। সংকটে থাকা ব্যাংকগুলোকে গত দেড় মাসে ৫ হাজার ৫৮৫ কোটি টাকার তারল্যসহায়তা দেওয়া হয়।

বাংলাদেশ ব্যাংকের গ্যারান্টি হলো কোনো কারণে কোনো ব্যাংক ঋণ পরিশোধে ব্যর্থ হলে কেন্দ্রীয় ব্যাংক ওই টাকা দেবে। আপাতত কেন্দ্রীয় ব্যাংক সরাসরি টাকা না দিয়ে অন্য ব্যাংক থেকে ধারের ব্যবস্থা করছে। অর্থাৎ বাজারের টাকা এক ব্যাংক থেকে আরেক ব্যাংকে যাবে। ফলে মূল্যস্ফীতির ওপর বাড়তি প্রভাব পড়বে না।

এদি‌কে সংকটে পড়া সাত ব্যাংক ঘুরে দাঁড়াতে প্রায় ২৯ হাজার কোটি টাকার তারল্য-সহায়তা চেয়েছে। এর মধ্যে ইসলামী ব্যাংক ৫ হাজার কোটি, ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক ৭ হাজার ৯০০ কোটি, সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক ২ হাজার কোটি, ইউনিয়ন ব্যাংক ১ হাজার ৫০০ কোটি, গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক সাড়ে ৩ হাজার কোটি, ন্যাশনাল ব্যাংক ৫ হাজার কোটি ও এক্সিম ব্যাংক ৪ হাজার কোটি টাকা চেয়েছে।

এস আল‌মের ৮‌টি ছাড়া পর্ষদ পুনর্গঠন করা অন্য তিন ব্যাংক হ‌চ্ছে আইএফআইসি, ইউসিবি ও এক্সিম ব্যাংক।

এর মধ্যে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগবিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমানের দখলে ছিল আইএফআইসি ব্যাংক, সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী ও তার পরিবারের নিয়ন্ত্রণে ছিল ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংক। এছাড়া, এক্সিম ব্যাংকের দখলে ছিলেন প্রভাবশালী ব্যবসায়ী এবং বেসরকারি ব্যাংকের উদ্যোক্তা ও প‌রিচালক‌দের সংগঠন বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকের (বিএবি) সাবেক চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম মজুমদার।

Post date: November 20, 2024

Last modified: November 20, 2024