চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে একটি পুরনো জাহাজ ভাঙার কারখানায় ভয়াবহ বিস্ফোরণে ১২ জন শ্রমিক দগ্ধ হয়েছেন। শনিবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে শীতলপুর তেঁতুলতলা এলাকার এসএন করপোরেশনের শিপ ইয়ার্ডে এই দুর্ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় দগ্ধ ৮ জনকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতাল থেকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় ঢাকায় শেখ হাসিনা বার্ন ইনস্টিটিউটে পাঠানো হয়। বিস্ফোরণের ফলে আহতদের আর্তনাদে হাসপাতালের পরিবেশ ভারি হয়ে ওঠে।
জাহাজ ভাঙা শিল্পের ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থা ও নিরাপত্তা উপেক্ষা নিয়ে সমালোচনা শুরু হয়েছে। স্থানীয়রা অভিযোগ করেছেন, মালিকপক্ষের অবহেলার কারণে শ্রমিকরা প্রতিনিয়ত ঝুঁকির মধ্যে কাজ করে। সঠিক সুরক্ষা ব্যবস্থা না থাকায় দুর্ঘটনা ঘটছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
চমেক হাসপাতালে বার্ন ইউনিটের প্রধান ডা. রফিক উদ্দিন আহমেদ জানান, দগ্ধ ১২ জনের মধ্যে ১০ থেকে ৯০ শতাংশ পর্যন্ত শরীর পুড়ে গেছে এবং তাদের শ্বাসতন্ত্র ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বিশেষ করে আহমদ উল্লাহ ও আল আমিনের অবস্থা অত্যন্ত সংকটাপন্ন, তাদের শরীরের যথাক্রমে ৯০ ও ৮০ শতাংশ পুড়ে গেছে। আহতদের মধ্যে বেশিরভাগেরই শ্বাসতন্ত্র ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় তাদের চিকিৎসা অত্যন্ত জটিল।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, বিস্ফোরণটি ঘটে জাহাজের পাম্প রুমে, যখন সেটি কাটা হচ্ছিল। বিকট শব্দে বিস্ফোরণের পর শ্রমিকরা দগ্ধদের উদ্ধার করে দ্রুত হাসপাতালে পাঠায়। বিস্ফোরণের কারণ হিসেবে ধারণা করা হচ্ছে কারখানার অবকাঠামোগত দুর্বলতা ও ঝুঁকিপূর্ণ কর্মপরিবেশ।
এ শিল্পে নিরাপত্তা ঘাটতি নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে উদ্বেগ থাকলেও মালিকপক্ষের পক্ষ থেকে কোনো কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়নি। স্থানীয়দের অভিযোগ, শ্রমিকদের নিরাপত্তা ও স্বাস্থ্য সুরক্ষায় কোনও উদ্যোগ নেই। এ খাতে শ্রমিকরা নিয়মিতভাবে দুর্ঘটনার শিকার হলেও তাদের জন্য পর্যাপ্ত চিকিৎসা সুবিধা ও ক্ষতিপূরণ নিশ্চিত করা হয় না।
বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব লেবার স্টাডিজ (বিলস) জানায়, গত ৯ বছরে ১২৪ জন শ্রমিক জাহাজ ভাঙার কারখানায় দুর্ঘটনায় মারা গেছে, তবু এই শিল্পে নিরাপত্তা বিধানে উল্লেখযোগ্য কোনো পদক্ষেপ দেখা যায়নি।