এক বছরে সুইস ব্যাংকে বাংলাদেশিদের অর্থ বেড়েছে ৩৩ গুণ

গত তিন দশকে এটিই পঞ্চম সর্বোচ্চ রেকর্ড এবং গত পাঁচ বছরে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ

Last modified: June 20, 2025

এক বছরে সুইস ব্যাংকে বাংলাদেশিদের অর্থ বেড়েছে ৩৩ গুণ

সুইস ব্যাংকে বাংলাদেশি ব্যক্তি ও ব্যাংকগুলোর রাখা জমা অর্থের পরিমাণ এক বছরের ব্যবধানে ৩৩ গুণ বেড়েছে।
২০২৩ সালে ১ কোটি ৭ লাখ ১০ হাজার ফ্রাঁ (সুইজারল্যান্ডের মুদ্রা) জমা থাকলেও বছরের ব্যবধানে তা এসে দাঁড়িয়েছে ৫৮৯ দশমিক ৫৪ মিলিয়ন সুইস ফ্রাঁ—যা বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ৮ হাজার ৮৩২ কোটি টাকা। 

সুইস ন্যাশনাল ব্যাংকের (এসএনবি) বার্ষিক ব্যাংকিং পরিসংখ্যান অনুযায়ী, এই বিশাল অঙ্কের বেশির ভাগই এসেছে বাংলাদেশি ব্যাংকগুলোর কাছ থেকে।
২০২৩ সালে ব্যাংকের মাধ্যমে সুইস ব্যাংকে মাত্র ৩ দশমিক ৪৮ মিলিয়ন সুইস ফ্রাঁ জমা হলেও, ২০২৪ সালে জমা হয়েছে ৫৭৬ দশমিক ৬১ মিলিয়ন ফ্রাঁ।

গত দুই বছর টানা পতনের পর গত বছর সুইস ব্যাংকে বাংলাদেশিদের অর্থের পরিমাণ আকস্মিক বৃদ্ধির সময়কালে বাংলাদেশে একটি অস্থির রাজনৈতিক পরিস্থিতি পার করেছে।

তাই বিশ্লেষকরা বলছেন, এ ধরনের বিশৃঙ্খল পরিবেশে রাজনৈতিকভাবে সংযুক্ত ব্যক্তিরা বিদেশে অর্থ স্থানান্তরের মাধ্যমে নিরাপদ আশ্রয় খুঁজে নিয়েছেন।

দ্য ডেইলি স্টারকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বিশ্ব ব্যাংকের ঢাকা কার্যালয়ের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ জাহিদ হোসেন বলেন,

‘এখন আর কেবল সুইস ব্যাংক নয়। দুবাই থেকে শুরু করে আয়ারল্যান্ড পর্যন্ত নতুন সব নিরাপদ আশ্রয় তৈরি হয়েছে, যেখানে আপনি সম্পত্তি কিনতে পারেন, অ্যাকাউন্ট খুলতে পারেন এবং গোপনে টাকা স্থানান্তর করতে পারেন।’

তিনি আরও বলেন,

‘এক সময় সুইস ব্যাংকের যে গোপনীয়তার পরিচিতি ছিল, তা এখন আর আগের মতো নেই। যুক্তরাজ্য থেকে সুইস ব্যাংকে যাওয়া অর্থ আইনগতভাবে বৈধ হতে পারে, কিন্তু তা আগে হয়তো আমদানি-রপ্তানিতে ভুয়া হিসাবের মাধ্যমে পাচার করা হয়েছিল।

এখনকার পাচার কৌশল এতটাই জটিল যে, অনেক সময় এসব অর্থ বৈধ পথ ধরে এলেও তার উৎস সন্দেহজনক মনে হতে পারে।’

বাংলাদেশের অর্থনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে তৈরি একটি শ্বেতপত্র তৈরি প্যানেলে ছিলেন অর্থনীতিবিদ জাহিদ হোসেন।

গত বছরের ডিসেম্বরে প্রকাশিত শ্বেতপত্র অনুযায়ী, ২০০৯ থেকে ২০২৩ সালের মধ্যে বাংলাদেশ থেকে মোট ২৩৪ বিলিয়ন ডলার পাচার হয়েছে।

এক বছরে সুইস ব্যাংকে বাংলাদেশিদের অর্থ বেড়েছে ৩৩ গুণ

প্রতিবেদনে বলা হয়-

পাচার হওয়া অর্থ প্রাথমিকভাবে সংযুক্ত আরব আমিরাত, যুক্তরাজ্য, কানাডা, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, হংকং, মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর ও ভারতের পাশাপাশি বেশ কয়েকটি দেশে পাঠানো হয়েছিল বা পাচার করা হয়েছিল।

  • ২০২৪ সালে সুইস ব্যাংকে বাংলাদেশি নাগরিক ও প্রতিষ্ঠানের অর্থ আগের বছরের তুলনায় ৩৩ গুণ বেড়েছে।
  • ২০২৩ সালে ছিল রেকর্ড সর্বনিম্ন ১৭ দশমিক ৭ মিলিয়ন ফ্রাঙ্ক।
  • ২০২২ সালে কমলেও, তার আগের বছর ২০২১ সালে ৮৭১ মিলিয়ন ফ্রাঁ ছিল।

এসএনবির এই বার্ষিক প্রতিবেদন ‘ব্যাংকস ইন সুইজারল্যান্ড’ ক্যাটাগরিতে সুইস ব্যাংকে রাখা বিভিন্ন মুদ্রার অর্থের হিসাব তুলে ধরা হয়, যা বাংলাদেশের নাগরিক, বাসিন্দা বা প্রতিষ্ঠানের নামে রয়েছে।
তবে এ প্রতিবেদন থেকে কে অর্থ জমা রেখেছে বা কী উদ্দেশ্যে রেখেছে—তা জানা যায় না।

সুইস ব্যাংক দীর্ঘদিন ধরে গোপনীয়তার প্রতীক হিসেবে পরিচিত, যার ফলে পাচার হওয়া অর্থ রাখার জায়গা হিসেবে এর বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে।
যদিও সাম্প্রতিক সংস্কারের মাধ্যমে কিছুটা স্বচ্ছতা ও আন্তর্জাতিক সহযোগিতা বৃদ্ধি পেয়েছে। তবে এসব ব্যাংকের ভূমিকা এখনো তদন্তের আওতায় আছে।

২০১৫ থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত সুইস ব্যাংকে বাংলাদেশিদের অর্থের পরিমাণ ৪৮০ মিলিয়ন থেকে ৬৬০ মিলিয়ন ফ্রাঁর মধ্যে ঘোরাফেরা করেছিল।

সর্বশেষ এই বৃদ্ধির ফলে আবারও নজরদারি বাড়বে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
বিশেষ করে যখন বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকার স্বচ্ছতা ও পাচার হওয়া সম্পদ ফেরত আনার অঙ্গীকার করেছে।

জাহিদ হোসেন বলেন,

‘বৈশ্বিক অভিজ্ঞতা বলছে, অবৈধভাবে পাচার হওয়া অর্থ ফেরত আনার হার মাত্র ১ শতাংশ। টাকা ফেরত আনতে হলে দু’টি দেশেই মামলা জিততে হয়—অর্থ যেখান থেকে গেছে এবং যেখানে জমা হয়েছে। টাকা অবৈধভাবে গেছে কেবল এটা জানা যথেষ্ট নয়, আপনাকে আদালতে তা প্রমাণ করতে হবে, তাও দুবার।’

Post date: June 20, 2025

Last modified: June 20, 2025