২০০৮ সালের নির্বাচনের মাত্র ১৯ দিন আগে আওয়ামী লীগে যোগ দেন এমএ লতিফ, যিনি পরে বন্দর-পতেঙ্গা আসনে (চট্টগ্রাম-১১) নৌকা প্রতীক নিয়ে নির্বাচিত হন। ওই নির্বাচনে বিএনপির প্রার্থী আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরীকে হারিয়ে এমপি নির্বাচিত হন। পরবর্তী সময়ে, ২০১৪, ২০১৮ এবং ২০২৪ সালের নির্বাচনে কখনো বিনা ভোটে, কখনো কেন্দ্র দখল করে নৌকার টিকিটে জয় লাভ করেন তিনি। চট্টগ্রাম আওয়ামী লীগের নেতাদের মধ্যেও এ নিয়ে অসন্তোষ ছিল, কিন্তু কেন্দ্রীয় স্তরের অদৃশ্য সমর্থন থাকায় তার অবস্থান কখনও ঝুঁকির মুখে পড়েনি। এই সময়ে তার প্রভাব ক্রমাগত বেড়েছে।
চট্টগ্রাম বন্দরের বিভিন্ন ব্যবসায়িক সংগঠন, ওয়াটার ট্রান্সপোর্ট সেল এবং চট্টগ্রাম চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিসে তার একক আধিপত্য ছিল। গত বছর, প্রভাব খাটিয়ে চট্টগ্রাম বন্দরের বহির্নোঙ্গরে পণ্য খালাসের (শিপ হ্যান্ডলিং) লাইসেন্স নেন এমএ লতিফ। নিজের প্রভাব বজায় রাখতে তিনি চট্টগ্রামের শতবর্ষী ব্যবসায়িক সংগঠনে ‘পরিবারতন্ত্র’ প্রতিষ্ঠা করেন। দেশের বৃহত্তম রপ্তানি প্রক্রিয়াজাতকরণ অঞ্চল চট্টগ্রাম ইপিজেডেও তার প্রভাব ছিল। এমপি হওয়ার পর থেকে ১৫ বছর ধরে ব্যবসায়ীদের ওপর তার দাপট অব্যাহত ছিল।
এমএ লতিফ সংসদ সদস্য হওয়ার পর একের পর এক বিতর্কে জড়ান। এলাকাবাসী তার কাছে যেতে সাহস পেতেন না। নানা শ্রেণি-পেশার মানুষ তার অপমানের শিকার হন। ২০০৯ সালে চট্টগ্রাম বন্দরের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার সঙ্গে দুর্ব্যবহার করে শিরোনাম হন। পরে পতেঙ্গায় দুই পুলিশ কর্মকর্তাকে লাঞ্ছিত এবং বিমানের ফ্লাইটে পুলিশের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার সঙ্গেও দুর্ব্যবহার করেন। ক্ষমতার প্রভাবে তিনি দিনে দিনে বেপরোয়া হয়ে উঠেন।
চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে এমএ লতিফের বিপুল সম্পদ রয়েছে। ২০১৬ সালে মুন্সীগঞ্জ পৌরসভার চরকিশোরগঞ্জে ১০টি পরিবারের জমি দখল করে গ্লোব শিপইয়ার্ড ইঞ্জিনিয়ারিং নামে একটি প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলেন। এই শিপইয়ার্ডের জন্য ফসলি জমি দখল করে সড়ক নির্মাণ করেন। স্থানীয়দের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দিয়ে জমি দখলে রাখেন। গত বছর চট্টগ্রাম বন্দরের বহির্নোঙ্গরে ২৩টি লাইসেন্সের মধ্যে একটি তার প্রতিষ্ঠানেরও ছিল।
২০০৮ সালে চট্টগ্রাম চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (সিসিসিআই) সভাপতি হন এমএ লতিফ। তার পর থেকে চেম্বারে নির্বাচন হয়নি। তিনি নিজের পছন্দ অনুযায়ী প্রার্থী নির্বাচন করতেন এবং বিরোধীদের বাদ দিয়ে দাপট দেখাতেন। পরবর্তী সময়ে, চেম্বারের নেতৃত্ব তার পরিবারের সদস্যদের হাতে চলে আসে, যা ব্যবসায়ী মহলে সমালোচনার জন্ম দেয়। এমএ লতিফের ছেলে ওমর হাজ্জাজ এবং ওমর মুক্তাদিরকে চেম্বারের বিভিন্ন পদে বসিয়ে দেন তিনি।
৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের পর চেম্বার নেতৃত্বের বিরুদ্ধে আন্দোলনে নামেন সাধারণ ব্যবসায়ীরা। আন্দোলনের মুখে, লতিফের ছেলে ওমর হাজ্জাজসহ ২৪ পরিচালক পদত্যাগ করেন। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে গুলির ঘটনায় এমএ লতিফকে গ্রেফতার করা হয়। ৪ আগস্ট নগরীর ডবলমুরিং থানার দেওয়ানহাট এলাকায় গুলি করা হয়। এই ঘটনায় তিনি নিজেই এমএ লতিফসহ ১৬ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেন।