রয়েল বাংলা সুইট হাউসে ছয় দশকের ঐতিহ্যের ইফতার

Last modified: March 10, 2025

রয়েল বাংলা সুইট হাউসে ছয় দশকের ঐতিহ্যের ইফতার

পবিত্র মাহে রমজানের শুরু থেকেই ইফতারের জন্য পছন্দের আইটেমটি নিতে রোজাদারদের দীর্ঘ সারি দেখা যায় বিভিন্ন রেস্তোরাঁগুলোতে। আর তা যদি হয় ঐতিহ্যবাহী কোনো খাদ্য প্রতিষ্ঠান তাহলে তো দীর্ঘ লাইন অতিক্রম করে তবেই পছন্দের ইফতারের দেখা মেলে। রয়েল বাংলা সুইট হাউসও তেমনই রমরমা একটি ইফতার বাজার, যা ছয় দশকের ঐতিহ্যের ইফতারের পসরা নিয়ে ক্রেতাদের জন্য অপেক্ষা করে থাকে।

বোম্বাইওয়ালার মিষ্টির দোকান, এসেছেন ইয়েমেন থেকে

শুধু চট্টগ্রামেই নয়, দেশের আনাচে কানাচে সুনাম অর্জন করেছে চট্টগ্রামের ঐতিহ্যবাহী খাদ্য প্রতিষ্ঠান রয়েল বাংলা সুইট হাউস। একসময় মানুষের মুখে মুখে বোম্বাইওয়ালা মিষ্টির দোকান হলেও আদতে এটা সম্পূর্ণ বাঙালিয়ানা খাবারের দোকান। বংশ পরম্পরায় পূর্বপুরুষরা ইয়েমেন থেকে এসেছেন বলে জানান প্রতিষ্ঠানের স্বত্বাধিকারী মোহাম্মদ আলি।

ছয় দশকের ঐতিহ্যের ইফতার

যদিও সারা বছর জমজমাট থাকে, তবে রমজান এলেই যেন ক্রেতাদের ভিড় বেড়ে যায় দোকানে। এমন ভিড়ের রহস্য জানতে চাইলে মোহাম্মদ আলি বলেন,

’আমাদের এই প্রতিষ্ঠান দীর্ঘ ষাট বছর ধরে সুনামের সাথে চলছে। আমাদের খাবারের গুণগত মান ভালো বলেই মানুষের মধ্যে একটা আগ্রহ থাকে। তাছাড়া রমজানে আমরা বিশেষ ইফতার তৈরি করে থাকি।’

দীর্ঘ ষাট বছরের ঐতিহ্যবাহী চিকন জিলাপী
রয়েল বাংলা সুইট হাউসের ঐতিহ্যবাহী চিকন জিলাপী।

চিকন জিলাপীর আর নিজস্ব দই 

দীর্ঘ ষাট বছরের ঐতিহ্যবাহী ইফতার আইটেম সম্পর্কে তিনি বলেন,

’আমাদের ‘চিকন জিলাপি’ সবচেয়ে জনপ্রিয়। এটিক জালেবিও বলা হয়। এখানে আর কোথাও এই জিলাপি পাওয়া যায়না। পাশাপাশি ইফতার সামগ্রী যেমন, পেঁয়াজু, বেগুনি, সবজি পেঁয়াজু, মুরগির বিভিন্ন আইটেম ছাড়াও যা সবচেয়ে স্পেশাল তা হল হালুয়া, সেমাই আর ফিরনি। আমাদের তৈরি করা দইও এখানে বিখ্যাত। গরুর খাঁটি দুধ দিয়ে দই বানিয়ে থাকি। বাইরে থেকে কৃত্রিম কিছু অর্থাৎ কেমিক্যাল, পাউডার দুধ- এগুলো দেওয়া হয়না।’

১২ রকমের হালুয়া

প্রতিষ্ঠানের সূচনালগ্ন থেকে বিশেষ আইটেম সম্পর্কে জানতে চাইলে মোহাম্মদ আলি বলেন,

‘আমাদের তৈরিকৃত হালুয়া আর চানাচুর সবচেয়ে পুরনো খাবার। রুচিসম্মত চানাচুর তৈরি করে থাকি আমরা। পাশাপাশি ১২ রকমের হালুয়া তৈরি হয় আমাদের প্রতিষ্ঠান থেকে। যা ক্রেতাদের মাঝে ভালোবাসার জায়গা করে নিয়েছে।’

রয়েল বাংলা সুইট হাউসে ছয় দশকের ঐতিহ্যের ইফতার। ১২ রকমের হালুয়া তৈরি হয় যা ক্রেতাদের মাঝে ভালোবাসার জায়গা করে নিয়েছে।
১২ রকমের হালুয়া তৈরিতে রয়েল বাংলা সুইট হাউস সেরা।

দুই’শ রকমের আইটেম

প্রত্যেক বছর একই রকম ইফতার বানান কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন,

’আমরা প্রায় দুইশ রকমের আইটেম তৈরি করে থাকি। যা একদম ফিক্সড। নতুন কিছু তৈরি করার মত চিন্তা করিনা আপাতত। তবে হালুয়া, সেমাই, ফিরনি এগুলোর মধ্যে ভিন্নতা নিয়ে আসি।
এই প্রতিষ্ঠানের ঐতিহ্যটা ধরে রেখেছি৷ লাভ করার জন্য আমরা বসিনি। যা পাই তাই পরের দিন আবার খরচ করি। বাইরে থেকে বিশেষ করে ভারত থেকে আমরা পণ্য এনে থাকি। যা এখানে কম দামে বিক্রি করি। আলহামদুলিল্লাহ, আমাদের ব্যবসার ঐতিহ্য এখনো অক্ষুণ্ণ আছে’

– বলেন মোহাম্মদ আলি।

রয়েল বাংলা সুইট হাউসে ছয় দশকের ঐতিহ্যের ইফতার। আরবের আফ্লাতুন শুধু এখানেই পাওয়া যায়।
আরবের আফ্লাতুন বাংলাদেশে

তিনি বলেন,

‘আমার বাবা হাজি মইজ আহমেদ আলি এই প্রতিষ্ঠানে অনেক খাবারকে পরিচিতি দিয়েছেন। যা বাংলাদেশে আগে কেউ শোনেনি। তার মধ্যে আফ্লাতুন অন্যতম। এই খাবার একমাত্র আরব দেশেই পাওয়া যায়। আমার বাবার অধীনেই এখানে আমরা সবাই কাজ করে থাকি। তিনি আমাদের কমান্ড দিয়ে থাকেন।’

চট্টগ্রামে সবচেয়ে পুরানো খাবারের দোকান

মোহাম্মদ আলি বলেন,

‘রয়েল বাংলা সুইট হাউস বাংলাদেশের একমাত্র সবচেয়ে পুরনো একই মালিকানাধীন খাদ্য প্রতিষ্ঠানের স্বীকৃতি পেয়েছে। চট্টগ্রামে পুরনো লাইসেন্স একমাত্র আমাদের কাছেই আছে, যেটি সেই প্রথম সিটি করপোরেশন থেকে পাই।’

রয়েল বাংলা সুইট হাউসে ছয় দশকের ঐতিহ্যের ইফতার। স্বাস্থ্যের দিক দিয়ে শতভাগ নিশ্চিতকরণ খাদ্য প্রতিষ্ঠান।
পরিচ্ছন্ন পরিবেশে খাদ্য পরিবেশন নিশ্চিত করা হয়।
খাবারের মান নিয়ে ছয় দশকেও অভিযোগ আসেনি

রয়েল বাংলা সুইট হাউস স্বাস্থ্যকর খাবার পরিবেশন করে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন,

‘আমাদের প্রতিষ্ঠানে ছয় দশকে আজ পর্যন্ত কোনো অভিযোগ আসেনি। অনেক প্রতিষ্ঠান এসেছে আমাদের খাবার বানানোর প্রক্রিয়া দেখতে। কিন্তু কোনো অসংগতি কিংবা ভেজাল পাওয়া যায়নি।
গর্ব করে বলতে পারব, এখানে স্বাস্থ্যের দিক দিয়ে শতভাগ নিশ্চিত থাকা যাবে। আমাদের ৩০ জন কর্মচারী আছে। যারা সবসময় ভালো খাবার পরিবেশন করার চেষ্টা করেন।’

‘দেশে একমাত্র আমরাই খাঁটি হালিম বানিয়ে থাকি। বাকিরা ডালগুষ বানায়। আমাদের হালিম দীর্ঘ ১৫ ঘণ্টা ধরে ধীরে ধীরে চুলায় রেখে তৈরি করা হয়।’ -বলেন মোহাম্মদ আলি।

গত চার বছরে বাড়েনি খাবারের দাম

খাবার দাম সম্পর্কে জানতে চাইলে মোহাম্মদ আলি বলেন,

‘আমরা গত চারবছর ধরে কোনো খাবারের দাম বাড়াইনি৷ সবকিছুর দাম বাড়লেও আমরা দামের দিক দিয়ে সচেতন। খাবারের মান, দাম এমনকি খাবার পরিমাণও একই রকম আছে। আমার বাবার কড়া নির্দেশ দাম বাড়ানো যাবেনা। এই ঐতিহ্য ধরে রাখতে হলে আমাদের খাবারের মান অক্ষুণ্ণ রাখতেই হবে।’

খাবারের মান অক্ষুণ্ণ থাকার ফলে ক্রেতাদের ভীড় লেগেই থাকে।
খাবারের মান অক্ষুণ্ণ থাকার ফলে ক্রেতাদের ভীড় লেগেই থাকে।

 

হোম ডেলিভারি নেই, কুরিয়ারে পাঠানো যায় চট্টগ্রামের বাইরে

ঐতিহ্যবাহী এই দোকানের খাবার বাইরে পাঠানোর সুযোগ আছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন,

‘আমরা হোম ডেলিভারি করিনা। তবে চট্টগ্রামের বাইরে কুরিয়ার সার্ভিসের মাধ্যমে পাঠাই। আমাদের বিশেষ গেস্ট (মেহমান) আছে, যারা অর্ডার করে থাকেন।’

তাদের সাথে ফোনে অথবা সামাজিক মাধ্যমেও যোগাযোগ করতে পারেন। যোগাযোগের ঠিকানাঃ
ফেসবুকঃ https://www.facebook.com/royalbangla.sweethouse
ফোন নম্বরঃ (+88) 01971 767 224
হোয়াটসঅ্যাপ নম্বরঃ (+88) 01782 767 224

রয়েল বাংলা সুইট হাউস থেকে ইফতার সামগ্রী কিনে খুশি ক্রেতারা। তাদের অনেকেই বলছেন, ঐতিহ্যবাহী এই খাবারগুলো ছাড়া ইফতার হয়না তাদের। এখানে খাবারের মান ভালো। তাই দূর দূরান্ত থেকে এসেও ইফতার কিনছেন তারা।

 

প্রতিবেদক
তাওরাত তানিজ
দ্য বিজনেস চট্টগ্রাম

Post date: March 5, 2025

Last modified: March 10, 2025