সারাদিন রোজা রাখার পর দেহ মন সব জুড়াতে পারে এক গ্লাস মজার, হৃদয় ঠান্ডা করা শরবত। ইফতারের সাইরেন কানে এলে তাই হাতে যে পানীয়টি রোজাদারেরা তুলে নেন তা হল শরবত। লেবু, তরমুজ, কমলাসহ নানা রকমের শরবত বাসায় বানানো হয়। তবে এসবকিছুর মিশ্রণে ‘মহব্বতের শরবত’ এখন ইফতারে চলছে পুরোদমে।
চট্টগ্রামে বিখ্যাত লাল মিয়ার মহব্বতের শরবত
চট্টগ্রামের লাভ লেইন এলাকায় ‘লাল মিয়ার মহব্বতের শরবত’ এখন জনপ্রিয়তার শীর্ষে। তরমুজ, কাঠ বাদাম, আমসহ বাহারি মহব্বতের শরবত পাওয়া যাচ্ছে লাল মিয়ার দোকানে।
‘গত দেড় যুগ ধরে চলছে আমাদের এই মোহাব্বতি শরবতের ব্যবসা। আলহামদুলিল্লাহ যথেষ্ট সাড়া পাচ্ছি। প্রতিদিন মানুষ আসেন আর এই শরবত নিয়ে যান আমাদের কাছ থেকে। এই শরবত পুরো চট্টগ্রামেই বিখ্যাত। গ্রাহকদের চাহিদা মেটাতে অঙ্গিকারবদ্ধ আমরা।’
-বললেন লাল মিয়ার পুত্র মোহাম্মদ ইয়াছিন।
তিনি বলেন,
‘আমাদের শরবতে ১৩-১৪টি মিশ্রণ থাকে। যার মধ্যে তরমুজ, গরুর দুধ, রুহ আফজা ইসবগুলের ভুসি, বিভিন্ন ফল সহ আমাদের নিজেদের সিক্রেট রেসিপি।
এবছর নতুন করে জাফরান ম্যাংগো জুস যুক্ত করেছি। যেটা পাকা আমের রস দিয়ে তৈরি করা হয়।’
মোহাম্মদ ইয়াসিন বলেন,
‘এখানের সবচেয়ে পুরনো ব্যবসা হচ্ছে আমাদেরটাই। আমার বাবা গত আটারো বছর ধরে এই ব্যবসায় জড়িত। সফলও হয়েছেন। এরপর থেকেই এখন নতুন করে অনেকেই এই ব্যবসা শুরু করেছেন। তবে আমাদের দোকানের চাহিদা সবার কাছে একটু বেশি।’
মোহাব্বতি শরবত আমরা দেখি ভারত, পাকিস্তানসহ মুসলিম দেশগুলোতে। বাহারি রকমের ফলমূলের মিশ্রণে এই শরবত তৈরি করা হয়। তবে সেটা স্বাস্থ্যের জন্য ঠিক কতটা ভালো তা হয়তো কারও জানা নেই।
বিহার থেকে চট্টগ্রামে
মহব্বতের শরবতের লাল মিয়া জানান, ভারতের বিহারে তার দাদা রাজু শেখের হাত ধরেই এই শরবতের ব্যবসা শুরু হয়। দেশভাগের পর তারা বাংলাদেশে চলে আসেন। এরপর তারা গাজীপুরে স্থায়ীভাবে বসবাস করতে থাকেন। তারা বাবা শামসুল শেখও গাজীপুরে এই শরবত বিক্রি করে তাদের বড় করেছেন।
২০০৮ সালের দিকে তিনি চট্টগ্রাম চলে আসেন। তখন থেকেই লাভ লেইন এলাকায় শুরু করেন শরবত বিক্রির ব্যবসা। সেই থেকেই তিন পুরুষের ব্যবসা ধরে রেখেছেন তিনি। বংশ পরম্পরায় এখন সেই ব্যবসার হাল ধরার পালা লাল মিয়ার ছেলে ইয়াসিনের।
স্বাস্থ্যকর শরবত
‘আমাদের শরবত শতভাগ স্বাস্থ্যকর। ফিল্টার করা পানি দিয়ে শরবত তৈরি করি। এখানে সবকিছু রাখা আছে, যে কেউ চাইলে মিশ্রণগুলো দেখতে পারেন।
আমরা যে বরফ ব্যবহার করি সেগুলোও ফিল্টার করা পানির। দামি ফিল্টার নিয়েছি একমাত্র পিওর পানির জন্য।’
-বললেন লাল মিয়া।
ফ্রেশ বোতলে শরবত বিক্রি
লাল মিয়া বলেন,
‘গত আটারো বছরে আজ পর্যন্ত কোনো অভিযোগ আমার কাছে আসেনি। অনেক বড় বড় মানুষ আমার কাছ থেকে শরবত নিয়ে যায়। একদম ফ্রেশ ফল, গরুর খাটি দুধ দিয়েই আমরা শরবত বানাই৷ ভেজাল কিছুই এখানে নেই।
আমরা যে বোতলে করে শরবত দিয়ে থাকি সেগুলো একদম ফ্যাক্টরি থেকে নতুন নিয়ে আসি। একেবারে ফ্রেশ বোতল।’
দাম কেমন মহব্বতের শরবতের
দোকান ঘুরে দেখা যায় শরবতের একটি মূল্য তালিকা দেয়া আছে। যেখানে প্রতিগ্লাস তরমুজের শরবতের দাম ৩০ টাকা, এক লিটার ১৫০ টাকা ও আধা লিটার ৮০ টাকা। কাঠ বাদামের শরবত বিক্রি হচ্ছে প্রতি গ্লাস ৪০ টাকা, এক লিটার ২২০ টাকা ও আধা লিটার ১১০ টাকায়।
আমের শরবতের দাম একটু বেশি। এক গ্লাস ৮০ টাকা আর প্রতি লিটার ৩৫০ টাকা।
সারা বছর বিক্রি হয় শরবত
মহব্বতের এই শরবতের চাহিদা সম্পর্কে মোহাম্মদ ইয়াসিন বলেন,
‘আমরা শুধু রমজানেই বিক্রি করিনা। সারাবছর ই আমাদের এই শরবত বানানো হয়। তবে রমজানে চাহিদা একটু বেশি। যেহেতু ইফতারের সাথে শরবত ভালোই জনপ্রিয়।’
সরজমিনে দেখা যায়, লাল মিয়ার মহব্বতের এই শরবতের চাহিদা অন্যান্যদের তুলনায় অনেক বেশি। গত দেড়যুগ ধরে তিনি সফলতার সাথে করছেন এই শরবতের ব্যবসা।
গ্রাহকদের চাহিদা মিটাতে পেরে খুশি লাল মিয়া ও তাঁর দোকানের কর্মচারীরা।
প্রতিবেদক
তাওরাত তানিজ
দ্য বিজনেস চট্টগ্রাম