চট্টগ্রাম নগরের জিইসি মোড়ে কেএফসি রেস্তোঁরা এবং কোকাকোলার সাইনবোর্ড সম্বলিত একটি ভবনে ইট-পাটকেল এবং জুতা নিক্ষেপ করেছে বিক্ষোভকারীরা। এতে ওই রেস্তোঁরা এবং ভবনের সামনের অংশের কাঁচ ভেঙে যায়। এ ছাড়া নগরীর কাজীর দেউড়ী এলাকায় ব্র্যাক ব্যাংকের শাখা ভাংচুরের চেষ্টা করে তারা।
সোমবার (৭ এপ্রিল) বিকেল সোয়া ৪টার দিকে ফিলিস্তিনের মুসলমানদের ওপর হামলার প্রতিবাদে ইসরায়েলবিরোধী কয়েকটি বিক্ষোভ মিছিল থেকে ইট-পাটকেল ছোঁড়া হয়।
ফিলিস্তিনের গাজায় গণহত্যার প্রতিবাদে আজ সোমবার বিশ্বব্যাপী হরতাল পালনের আহ্বান জানিয়েছেন নিপীড়িত গাজাবাসী। গণহত্যা বন্ধের দাবিতে বিশ্বের সব দেশে একযোগে ‘নো ওয়ার্ক, নো স্কুল’ কর্মসূচি পালিত হচ্ছে।
সেই কর্মসূচির অংশ হিসেবে চট্টগ্রামেও সকাল থেকে বিভিন্ন স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়, সংগঠন ও রাজনৈতিক দল গণহত্যার প্রতিবাদে বিক্ষোভ করছে।
বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে নগরের দুই নম্বর গেট বিপ্লব উদ্যানের সামনে থেকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন, জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) ইনকিলাব মঞ্চ ও হেফাজত ইসলামের পাঁচলাইশ থানা শাখার উদ্যোগে খণ্ড খণ্ড বিক্ষোভ মিছিল জিইসির দিকে রওয়ানা হয়। এতে সাধারণ মানুষসহ হাজারেরও বেশি শিক্ষক, শিক্ষার্থীসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ অংশ নেন।

বিকেল সোয়া ৪টার দিকে মিছিলটি নাসিরাবাদ অতিক্রম করার পরই সানমার ওশান সিটি শপিংমল সংলগ্ন কেএফসি রেস্তোঁরার সামনে থেমে যায়। একপর্যায়ে মিছিল থেকে জুতা ও ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করা হয়।
এতে রেস্তোঁরার সামনের অংশের কাঁচ ভেঙে চুরমার হয়ে যায়। পাঁচলাইশ থানার ওসি মো. সোলায়মান গণমাধ্যমকে জানান,
“ফিলিস্তিনিদের প্রতি সংহতি জানিয়ে করা মিছিল থেকে কেএফসি রেস্টুরেন্টে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করা হয়েছিল। তবে রেস্টুরেন্টটি বন্ধ ছিল।”
এরপর মিছিলটি অগ্রসর হয়ে জিইসি মোড় ঘুরে যাওয়ার সময় হোটেল জামান সংলগ্ন পাঁচলাইশ ট্রাফিক পুলিশ পরিদর্শকের কার্যালয়ের ওপরে থাকা ‘কোকাকোলা’র সাইনবোর্ডে ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করে বিক্ষুব্ধ জনতা।
এ সময় ওই ভবনের কাঁচও ভেঙে পড়ে যায়। এরপর সেখানে কিছুক্ষণ অবস্থানের পর মিছিলটি দুই নম্বর গেট অভিমুখে যাত্রা করে।
এ ছাড়া, বিকেল সাড়ে চারটার দিকে কাজীর দেউড়ী এলাকায় ব্র্যাক ব্যাংকের শাখা ভাঙচুরের চেষ্টা করে বিক্ষোভকারীরা। এ সময় তারা ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে সেখান থেকে সরে যায়।
এদিকে নগরীর আন্দরকিল্লা, জমিয়াতুল ফালাহ, চকবাজার, বহদ্দারহাটসহ বিভিন্ন জায়গায় বিক্ষোভ মিছিল করেছেন বিক্ষোভকারীরা।
মিছিলে অংশগ্রহণকারীরা এ সময়,
‘তেরা মেরা রিশতা কেয়া, লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’, ‘নারায়ে তাকবীর, আল্লাহু আকবর’, ‘উই ওয়ান্ট জাস্টিস’, ‘আমার ভাই মরল কেন, জাতিসংঘ বিচার চাই’, ‘বয়কট বয়কট, ইসরাইল বয়কট’, ‘আমেরিকার গালে গালে, জুতা মারো তালে তালে’, ‘ইহুদিদের গালে গালে, জুতা মারো তালে তালে’, ‘ইসরাইলের চামড়া তুলে নেব আমরা’, ‘ওয়ান টু থ্রি ফোর, জেনোসাইড নো মোর’, ‘ইসরাইল না ফিলিস্তিন, ফিলিস্তিন ফিলিস্তিন’
-এসব স্লোগান দেন।
এদিকে কক্সবাজার শহরসহ জেলার টেকনাফ, উখিয়া, রামু ও চকরিয়ায় শিক্ষার্থী, রাজনৈতিক কর্মী ও সাধারণ মানুষ দিনব্যাপী বিক্ষোভ করেন।
এসব বিক্ষোভ মিছিল থেকে কক্সবাজার শহরের পর্যটন জোন কলাতলীতে ইসরায়েলি পণ্যের সাইনবোর্ড থাকার অভিযোগে অন্তত ২০টি প্রতিষ্ঠানে ভাঙচুর চালানো হয়।
সোমবার বেলা ১২টার দিকে কক্সবাজার পাবলিক লাইব্রেরির শহীদ দৌলত ময়দান থেকে বিক্ষোভ মিছিল শুরু হয়ে হলিডে মোড় হয়ে ঘুরে লাবণী হয়ে কলাতলী যায়। এ সময় ভাঙচুর চালানো হয়।
কক্সবাজার সদর মডেল থানার ওসি মো. ইলিয়াস খান বলেন,
“পুলিশ মিছিলের আগেপিছে ছিল। মিছিলের দৈর্ঘ্য বেশি হওয়ায় মাঝখান থেকে কিছু অতি উৎসাহী মানুষ ইসরায়েলি পণ্য রাখার অভিযোগে কয়েকটি রেস্টুরেন্টে পেপসির সাইনবোর্ড নামিয়ে ফেলেছে। কিছু ঢিল ছোঁড়ার ঘটনা ঘটেছে। তবে মিছিলে উপস্থিত মুরুব্বিরা তাদেরকে তৎক্ষণাৎ নিয়ন্ত্রণ করেন।”
সরজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, কক্সবাজার শহরের পর্যটন জোনের সুগন্ধা এলাকায় টপ ফ্লোরে কেএফসি এবং এর নিচে পিৎজা হাটের অবস্থান। সেখানে বেশকিছু কাঁচ ভেঙে পড়ে আছে। ভাঙচুরের পর বন্ধ করা হয়েছে পিৎজা হাট। তবে খোলা রয়েছে কেএফসি।
এছাড়াও খুলনা, বরিশাল, বগুড়া, সিলেটসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে কেএফসি, পিৎজা হাট, ডমিনো’স, বাটা-এর দোকানে হামলা, লুটপাট ও ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে।