“শহীদি রক্তের বদৌলতে ফিলিস্তিন মুক্ত হবে, আল-আকসা মুসলমানদেরই থাকবে।”
-বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর এসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি জেনারেল ও কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য মাওলানা মুহাম্মদ শাহজাহান।
সোমবার (৭ এপ্রিল) বিকাল ৫টায় চট্টগ্রামের আন্দরকিল্লা শাহী জামে মসজিদ উত্তর গেটে গাজায় ইসরায়েলি গণহত্যার প্রতিবাদে ‘বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী চট্টগ্রাম মহানগরীর’ উদ্যোগে আয়োজিত বিক্ষোভ সমাবেশ ও মিছিলে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এই এসব কথা বলেন। মিছিলটি সমাবেশ শেষে নগরীর বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে নিউ মার্কেট মোড়ে গিয়ে শেষ হয়।
এতে ‘নারায়ে তাকবীর, আল্লাহু আকবর’, ‘ফিলিস্তিনে হামলা কেন জাতিসংঘ জবাব চাই’, ‘গাজাতে হামলা কেন জাতিসংঘ জবাব চাই’; ‘জিহাদ জিহাদ জিহাদ চাই জিহাদ করে বাঁচতে চাই’, ‘বিশ্ব মুসলিম ঐক্য কর ফিলিস্তিনকে মুক্ত কর’, ‘দুনিয়ার মুসলিম এক হও জিহাদ করো’, ‘বিপ্লব বিপ্লব ইসলামী বিপ্লব’, ‘ইসরাইলের আস্তানা ভেঙে দাও গুড়িয়ে দাও’, ‘জেগে ওঠো মুসলিম রক্তে ভাসে ফিলিস্তিন’, ‘ফিলিস্তিনে গণহত্যা বন্ধ করো করতে হবে’, ‘অবিলম্বে ইসরায়েলি পণ্য নিষিদ্ধ কর,করতে হবে’, ‘সন্ত্রাসী ইসরায়েল বয়কট বয়কট’ ইত্যাদি স্লোগান দেয়া হয় এবং এসব স্লোগান সম্বলিত প্ল্যাকার্ড ও ফেস্টুন বহন করা হয়।
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য, সংসদীয় দলের সাবেক হুইপ, চট্টগ্রাম মহানগরী আমীর ও সাবেক এমপি আলহাজ্ব শাহজাহান চৌধুরীর সভাপতিত্বে ও কেন্দ্রীয় মজলিশে শুরা সদস্য ও চট্টগ্রাম মহানগরী সেক্রেটারি অধ্যক্ষ মুহাম্মদ নুরুল আমিনের সঞ্চালনায় মিছিলটি নগরের বিভিন্ন স্থান প্রদক্ষিণ করে।
মিছিল পরবর্তী বিক্ষোভ সমাবেশে বক্তব্য রাখেন কেন্দ্রীয় মজলিসে শুরা সদস্য ও চট্টগ্রাম মহানগরী নায়েবে আমীর ড. আ. জ. ম. ওবায়েদুল্লাহ ও মুহাম্মদ নজরুল ইসলাম, নগর এসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি মুহাম্মদ উল্লাহ, ফয়সাল মুহাম্মদ ইউনুস ও মোহাম্মদ মোরশেদুল ইসলাম চৌধুরী, সাংগঠনিক সম্পাদক ও সাবেক কাউন্সিলর অধ্যক্ষ শামসুজ্জামান হেলালী, কর্মপরিষদ সদস্য ডা. মুহাম্মদ ছিদ্দিকুর রহমান, শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশন চট্টগ্রাম মহানগর সভাপতি এস এম লুৎফর রহমান প্রমুখ।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে মাওলানা মুহাম্মদ শাহজাহান বলেন,
“২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাস নির্মূলের নামে গাজায় আগ্রাসন চালায় দখলদার ইসরাইলি বাহিনী। এরপর থেকে এ ভূখণ্ডে চলছে হত্যাযজ্ঞ। নির্মম গণহত্যা চালানো হয় গাজার প্রতিটি অংশে। এতে প্রাণ হারায় ৫০ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি, যার মধ্যে নারী ও শিশুর সংখ্যা সবচেয়ে বেশি। হত্যাকাণ্ডের তালিকায় রয়েছে গণমাধ্যম, ত্রাণ ও স্বাস্থ্যকর্মী।
ইসরাইলি বোমায় নিহতের লাশ আকাশে উঠে জমিনে পড়তে দেখা যায়। রবিবার রাতভর ইসরাইলি হামলায় নিহত হয়েছে কমপক্ষে ৪৬ জন। এর মধ্যে গাজা শহরে বাবা ও মেয়েসহ প্রাণ হারিয়েছে ২১ জন। এ ছাড়া দক্ষিণাঞ্চলের একটি আশ্রয় শিবিরে হামলায় মারা গেছে কমপক্ষে ছয়জন।”
তিনি বলেন,
“গাজায় ইহুদিদের গণহত্যা পৃথিবীর ইতিহাসে জঘণ্য ও নিকৃষ্টতম যুদ্ধাপরাধ ও মানবতা বিরোধী অপরাধ। এই অপরাধে বিশ্ব সন্ত্রাসী রাষ্ট্র অবৈধ ইসরাইলের পৃথিবীর মানচিত্রে অস্তিত্বের কোনো নৈতিক অধিকার নাই।
বিশ্ব নেতৃবৃন্দকে ইসরাইলের বিরুদ্ধে ও মানবতার পক্ষে সোচ্চার ভূমিকা পালন করার জন্য আমরা উদাত্ত আহ্বান জানাচ্ছি।”
তিনি আরও বলেন,
“আগে ইসরায়েল ফিলিস্তিনে হামলা করলে মধ্যপ্রাচ্য থেকে প্রতিবাদ হতো, এখন হয় না। এর কারণ, মধ্যপ্রাচ্যও এখন পুঁজিবাদের অংশ হয়ে গেছে। কাজেই আমাদের এ লড়াই পুঁজিবাদী ও সাম্রাজ্যবাদী ব্যবস্থার বিরুদ্ধে। মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের সমর্থন আছে, এটা স্পষ্ট। ডোনাল্ড ট্রাম্পের কারণে আজ এই নৃশংস ঘটনা ঘটছে।”
সভাপতির বক্তব্যে আলহাজ্ব শাহজাহান চৌধুরী বলেন,
“মুসলিম দেশগুলো ঐক্যবদ্ধ না হলে ফিলিস্তিন মুক্ত করা সম্ভব নয়। মুসলমানদের মধ্যে ঐক্য সৃষ্টি না হওয়ার পেছনে কারণ হলো, দেশগুলোতে ইসলামপন্থি সরকার না থাকা। যদি দেশগুলোতে ইসলামপন্থি সরকার থাকত, তাহলে মুসলমানরা একতাবদ্ধ হওয়ার সুযোগ লাভ করত।”
এই সময় আরও উপস্থিত ছিলেন নগর কর্মপরিষদ সদস্য আবু হেনা মোস্তফা কামাল, আবু বকর সিদ্দিক, মাওলানা মমতাজুর রহমান, আমির হোছাইন, হামেদ হাসান ইলাহী, চট্টগ্রাম ৮ সংসদ সদস্য পদপ্রার্থী ডা. আবু নাসের।
অপরদিকে, চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা জামায়াতের উদ্যোগে কেরানীহাট সাতকানিয়া রাস্তার মাথা মডেল মসজিদ থেকে বিক্ষোভ মিছিল শুরু হয়ে পুরো কেরানীহাট প্রদক্ষিণ করে বান্দরবান রাস্তার মাথায় সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।
জামায়াতে ইসলামী চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলার আমীর জননেতা আনোয়ারুল আলম চৌধুরীর নেতৃত্বে অনুষ্ঠিত বিক্ষোভ মিছিলে আরও উপস্থিত ছিলেন জেলা নায়েবে আমীর অধ্যাপক মুহাম্মদ নুরুল্লাহ, সেক্রেটারী অধ্যক্ষ মাওলানা বদরুল হক, এসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারী এডভোকেট আবু নাছের, শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় দপ্তর সম্পাদক মুহাম্মদ নুরুল আমিন, সাংগঠনিক সেক্রেটারী মাওলানা নুরুল হোসাইন, অফিস সেক্রেটারী নুরুল হক, জেলা কর্মপরিষদ সদস্য ইঞ্জি শহীদুল মোস্তফা, চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা শিবিরের সভাপতি আসিফুল্লাহ আরমান, লোহাগাড়া উপজেলা আমীর অধ্যাপক আসাদুল্লাহ ইসলামাবাদী, সাতকানিয়া উপজেলা আমীর মাওলানা কামাল উদ্দীন, বাঁশখালী উপজেলা আমীর অধ্যক্ষ মাওলানা মুহাম্মদ ইসমাইল, জেলা শুরা সদস্য ডা: আবদুল জলিল, সাংগু থানার আমীর মাষ্টার সিরাজুল ইসলাম, চন্দনাইশ উপজেলার আমীর মাওলানা কুতুব উদ্দীন, সাতকানিয়া উপজেলার সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান ইব্রাহীম চৌধুরী, শাহাদাত হোসাইন প্রমুখ।