নতুন প্রজন্মের মধ্যে নতুন করে কিছু করার ইচ্ছা সবসময় জাগে। রমজানের ইফতারেও তার ব্যতিক্রম হয়নি। নদী-সমুদ্রের পাড়, লঞ্চ, খোলা আকাশের নীচেসহ নানা জায়গায় ইফতার করতে অনেকের মন চায়। বাহারি রকমের ইফতার বর্তমান প্রজন্মের আগ্রহের তুঙ্গে। এসবকিছু বিবেচনা করেই সদ্য শিক্ষাজীবন শেষ করা একদল তরুণ শুরু করেছেন চিলেকোঠা রুফটপ রেস্টুরেন্ট এন্ড ইভেন্ট হাব।
ফটিকছড়ির নাজিরহাট বাজারের পুরাতন ব্রীজ সংলগ্ন হালদা নদীর পাড় ঘেষা মোতালেব প্লাজার তৃতীয় তলায় গেল জানুয়ারিতে যাত্রা শুরু করে চিলেকোঠা রেস্টুরেন্টটি। মোহাম্মদ শাহাদাত হোসেন, মোহাম্মদ আকিব বিন আলি, আরমান উদ্দিন নয়ন এবং সৈয়দ আলসাদ- এই চারজন তরুণের উদ্যেগে যাত্রা শুরু করে চিলেকোঠা রেস্টুরেন্ট। এবারই প্রথম ইফতারের আয়োজন শুরু করেছেন তারা।
মিলছে ব্যাপক সাড়া
ইফতারের আয়োজন সম্পর্কে জানতে চাইলে রেস্টুরেন্টের সহ প্রতিষ্ঠাতা মোহাম্মদ শাহাদাত হোসেন বলেন,
‘মাত্র তিনমাস হলো আমাদের রেস্টুরেন্টের যাত্রা। প্রথম ইফতার আয়োজন হিসেবে যথেষ্ট সাড়া পাচ্ছি সবার কাছ থেকে।’
ইফতার আইটেমে কী কী আছে
শাহাদাত হোসেন বলেন,
‘ইফতারে ৭০টি আইটেম যুক্ত করেছি। সামনে আরও কিছু যুক্ত করার পরিকল্পনা আছে। বর্তমানে আমরা বিরিয়ানি, বিভিন্ন আইটেমের প্লেটার, কম্বো প্লেটার রেখেছি। প্লেটারের মধ্যে ২০০ টাকা থেকে শুরু করে ১২০০টাকা পর্যন্ত বিভিন্ন আইটেমের ইফতার আছে।
চারজন পর্যন্ত এই প্লেটার উপভোগ করতে পারবেন। প্লেটারে বিফ তেহেরি, তরমুজ, মোহাব্বতি শরবত,খেজুর, আপেল,চায়নিজ, সালাদ, পেঁয়াজু, আলুর চপ ইত্যাদি রয়েছে।
এছাড়াও যে কেউ চাইলে এর বাইরে অর্ডার দিয়েও ইফতার করতে পারবেন।’
চিলেকোঠার স্পেশাল আইটেম
‘চিলেকোঠার এবারের স্পেশাল আইটেম হচ্ছে বিরিয়ানি। আট রকমের বিরিয়ানি পরিবেশন করছি। যার মধ্যে হায়দারাবাদি বিরিয়ানি, স্পেশাল চিলেকোঠা বিরিয়ানি, হায়দারাবাদি বিফ ও চিকেন বিরিয়ানি, কাচ্চি বিফ ও মাটন বিরিয়ানি। এই বিরিয়ানি আইটেমগুলো এখন জনপ্রিয়তার শীর্ষে।’
-বলেন শাহাদাত হোসেন।
চিকেনের আইটেম
চিলেকোঠা রেস্টুরেন্টে আছে বিভিন্ন রকমের চিকেন আইটেম। যার মধ্যে- বারবিকিউ, নাগা উইংস, ফ্রাইড চিকেন, ক্রিস্পি চিকেন,চিকেন বাস্কেট,মম, অনথন ও মিট বক্স। চিকেন আইটেমগুলোর বেশ কদর আছে চিলেকোঠা রেস্টুরেন্টে। শাহাদাত হোসেন বলেন,
‘আমরা চিকেনের এই আইটেমগুলো শুরু থেকেই যুক্ত করেছি। ইফতারেও আছে। যে কেউ চাইলে চিকেনের আইটেম দিয়েও ইফতার করতে পারেন।’
চিকেনের বাইরেও আছে, পাস্তা, বার্গার, হরেক রকমের নুডলস, ইন্ডিয়ান ফুড, চিকেন মাসালা, বিফ মাসালা, মাটন মাসালা ইত্যাদি।

প্রাণ জুড়ানো পানীয়
শাহাদাত হোসেন বলেন,
‘আমাদের চিলেকোঠা রেস্টুরেন্টে বিভিন্ন রকমের জুস পরিবেশন করছি। যার মধ্যে, শরবতে মোহাব্বতি, লাচ্চি, লেমন জুস, ভ্যানিলা লাচ্ছি ইত্যাদি। সাথে আইসক্রিম, ওয়াফেলও আছে।
‘রমজান ব্যতিত আমাদের মোট ১১৭টি আইটেম আছে। রমজানের শুরু থেকে আমরা মেন্যুকে ছোট করে ৬০-৭০টি আইটেমে নিয়ে আসি ইফতারের জন্য। কারণ রাতের খাবার অনেকেই খাননা। তাই এখানে যুক্ত করেছি। রমজানের পর আবারও আমাদের আগের আইটেম চলবে এবং আরও কিছু আইটেম যুক্ত করা হবে।’
-বলেন শাহাদাত হোসেন।

আছে সাহরীর ব্যবস্থা
শাহাদাত হোসেন বলেন, এখনো আমরা সাহরির আয়োজন শুরু করিনি। নাজিরহাট বাজারের শপিংমল এখনো জমজমাট নয়। ২০ রমজানের পর থেকে সাহরির ব্যবস্থা করব। এখানেও বিরিয়ানি আইটেম থাকবে। যেহেতু বিরিয়ানি সবাই পছন্দ করেন।
চিলেকোঠায় স্বাস্থ্যকর খাবার
বর্তমানে সবাই চায় স্বাস্থ্যকর খাবার খেতে। তাই বিভিন্ন রেস্টুরেন্ট ঘুরে ঘুরে দেখেন সবাই। স্বাস্থ্যকর খাবার পরিবেশন নিয়ে শাহাদাত হোসেন বলেন,
‘আমরা রমজানে আইটেম কমিয়েছি একমাত্র দ্রুত সার্ভিস এবং খাবারের মান ধরে রাখতে। চিলেকোঠা রেস্টুরেন্টকে আমরা ঘরের মত সাজিয়ে রাখি। আমাদের কিচেন যথেষ্ট পরিষ্কার এবং পরিচ্ছন্ন। খাবারে যে পণ্যগুলো ব্যবহার করি সেগুলো শহর থেকে নিয়ে আসি।
পণ্যগুলো ভারত এবং মালয়েশিয়া থেকে আমদানিকরা। তাই আমরা স্বাস্থ্যকর খাবারের দিক দিয়ে চিন্তা করেই রেস্টুরেন্টের যাত্রা শুরু করেছি। এই ব্যাপারে আমরা শতভাগ নিশ্চিত।
এখনো পর্যন্ত কোনো অভিযোগ আমাদের কাছে আসেনি। আমাদের রেস্টুরেন্ট যেমন পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন তেমন খাবারের মানেও শতভাগ স্বাস্থ্যকর।’
বাড়তি মাত্রা যোগ করেছে পিজ্জা
চিলেকোঠা রেস্টুরেন্টে রমজান ব্যতিত অন্যসব আইটেমের মধ্যে চায়নিজ, থাই, ইন্ডিয়ান এবং ইতালিয়ান ফুড পাওয়া যাচ্ছে। শুরু থেকেই এসব খাবারের প্রতি মানুষের আগ্রহ বাড়ছে। শহর কেন্দ্রিক রেস্টুরেন্টগুলোতে যেমন বিদেশি ফুড রাখা হচ্ছে তেমনি গ্রামীণ রেস্টুরেন্টগুলোতেও এসব খাবারের জনপ্রিয়তা বাড়ছে।
‘স্পেশাল পিজ্জা এখন আমাদের চিলেকোঠায়। এই পিজ্জা আশেপাশের কোনো রেস্টুরেন্টে পাওয়া যাবেনা। এখানেই প্রথম। ১০ এবং ১২ ইঞ্চি এই পিজ্জাগুলো মূল্য ৬০০-১১০০ টাকা।’
-বলেন শাহাদাত হোসেন।
পড়ালেখা শেষ করে রেস্টুরেন্ট ব্যবসা
পড়ালেখা শেষ করে রেস্টুরেন্ট ব্যবসায় কেন এলেন জানতে চাইলে শাহাদাত হোসেন বলেন,
‘শিক্ষাজীবন শেষে আমরা চিন্তা করেছি শিক্ষাটা কোথাও না কোথাও কাজে লাগাব। আমরা কোচিং সেন্টারে পড়াই। পাশাপাশি চিন্তা করলাম মৌলিক চাহিদা মেটানোর জন্য স্বাস্থ্যকর খাবার পরিবেশন করব। তাই এশিয়ার প্রাকৃতিক প্রজনন খ্যাত হালদার তীরে নাজিরহাট বাজারে এই রেস্টুরেন্ট চালু করি।
আলহামদুলিল্লাহ শুরু থেকেই ফটিকছড়ির মানুষের যথেষ্ট সাড়া আমরা পাচ্ছি। ইফতারে আমাদের রেস্টুরেন্ট ভর্তি মানুষ থাকে। অনেকসময় জায়গাও দিতে পারিনা। সবার ভালোবাসায় আমরা অনুপ্রাণিত।’
চিলেকোঠা রেস্টুরেন্টে একটি সেমিনার কক্ষ আছে। যেখানে বিশজনের মত মানুষ বসে ইফতারসহ যেকোনো অনুষ্ঠানের আয়োজন করতে পারবেন। পাশাপাশি চিলেকোঠার মূল জায়গাতেও ইফতার পার্টি কিংবা অনুষ্ঠান করা যাবে।
হাটহাজারী থেকে ইফতার করতে আসা চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সৈয়দ সাকিব বলেন,
‘আমি একাধিকবার এখানে ইফতার করেছি। চিলেকোঠার অনেক সুনাম শুনেছি। আমরা বন্ধুরা এসে ভালোই ইফতার উপভোগ করেছি। চিলেকোঠা রেস্টুরেন্টের মান ভালো এবং দামও বেশি নয়।’
আছে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের সুবিধা
বর্তমান সময়ে অনেকেই পকেটে টাকা কম রাখেন মোবাইল ব্যাংকিং সুবিধার জন্য। চিলেকোঠা রেস্টুরেন্টে মোবাইল ব্যাংকিং সুবিধা সম্পর্কে জানতে চাইলে শাহাদাত হোসেন বলেন,
‘মোবাইল ব্যাংকিং পেমেন্টের সুবিধা আমরা শুধু থেকে চালু করেছি। রমজানের পর ব্যাংক কার্ড পেমেন্টের ব্যবস্থাও করব। খাবার উপভোগ করতে আসা সকলের সর্বাধিক সুবিধা আমরা বিবেচনায় রেখেছি।’
চালু হবে বুক কর্ণার
‘চিলেকোঠা রেস্টুরেন্টে আমরা শীঘ্রই বুক কর্ণার খুলতে যাচ্ছি। কাস্টমার চাইলে বসে বসে বইও পড়তে পারবেন। সাথে বাচ্চাদের খেলার ব্যবস্থাও থাকবে। আমাদের পরিধি বাড়ানো এবং গ্রাহকদের সকল সুবিধা দেব ইনশাআল্লাহ।’
-বলেন শাহাদাত হোসেন।
হোম ডেলিভারি
চিলেকোঠা রেস্টুরেন্টের মজাদার খাবার উপভোগ করা যাবে ঘরে বসেই। হটলাইন নম্বরে কল দিলে যেকোনো আইটেম বাসায় পৌছে যায়। এক্ষেত্রে নাজিরহাটের আশেপাশের জায়গার জন্য ৫০টাকা চার্জ নেয়া হয়। ইফতার আইটেমগুলোও চাইলে অর্ডার করা যাবে।
নান্দনিক সাজ ও নাম
চিলেকোঠা রেস্টুরেন্টের একেকটা টেবিলের একেকটা নাম আছে। রাজসভা, হৈমন্তী, শরৎপল্লী, সোনার তরী, রসনা বিলাস, বসন্ত ইত্যাদি। যেখানে আরামে বসে খাবার উপভোগ করতে পারেন ক্রেতারা।
হালদার পাড় ঘেষা প্রাকৃতিক সৌন্দর্য দেখে চিলেকোঠায় মানসম্মত খাবার উপভোগ করতে পারবে যে কেউ। মনোরম পরিবেশ ও নির্মল স্বাস্থ্যকর বাতাসে খাবার গ্রহনের আনন্দ বাড়িয়ে দেয় বহুগুন। ভবিষ্যতেও খাবারের মান ও গ্রাহক সেবার দিকে সর্বোচ্চ নজর থাকবে বলে জানান শাহাদাত হোসেন।
প্রতিবেদক
তাওরাত তানিজ
দ্য বিজনেস চট্টগ্রাম