‘আরও বেশি সেবা, আরও বেশি আশা’ এই অভিপ্রায়ে চট্টগ্রাম কিডনি ফাউন্ডেশনে ২৫ শয্যাবিশিষ্ট অত্যাধুনিক ডায়ালাইসিস ফ্লোর এবং কিডনি প্রতিস্থাপন অপারেশন থিয়েটারের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করা হয়েছে।
বাংলা নতুন বর্ষের শুভক্ষণে সোমবার (১৪ এপ্রিল) বিকেলে আনুষ্ঠানিকতার মাধ্যমে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন এই নতুন ডায়ালাইসিস ফ্লোর এবং কিডনি প্রতিস্থাপন অপারেশন থিয়েটার উদ্বোধন করেন।
এটি কিডনি ফাউন্ডেশনের দ্বিতীয় ডায়ালাইসিস ফ্লোর যেখানে রোগীদের আরও উন্নত সেবা দান নিশ্চিত করার প্রত্যাশায় অত্যাধুনিক সব ডায়ালাইসিস স্লেড মেশিন প্রতিস্থাপন করা হয়েছে।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে সিটি মেয়র বলেন,
“কিডনি রোগ এখন একটি জাতীয় স্বাস্থ্য সমস্যায় পরিণত হয়েছে। সময়মতো চিকিৎসা না পেলে রোগী মৃত্যুর ঝুঁকিতে পড়ে। এই প্রেক্ষাপটে চট্টগ্রাম কিডনি ফাউন্ডেশনের এই উদ্যোগ নিঃসন্দেহে সময়োপযোগী ও প্রশংসনীয়।”
তিনি আরও বলেন,
“জনসেবায় নিয়োজিত প্রতিষ্ঠানগুলো নগরবাসীর স্বাস্থ্যসেবায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন সবসময় জনকল্যাণমুখী কার্যক্রমের পাশে থাকবে।”
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন পিএইচপি ফ্যামিলির চেয়ারম্যান সুফি মুহাম্মাদ মিজানুর রহমান। তিনি বলেন,
“সাধারণ মানুষের জন্য উন্নত চিকিৎসা সহজলভ্য করতে আমাদের দায়বদ্ধতা রয়েছে। এই নতুন ফ্লোরের মাধ্যমে অনেক অসহায় কিডনি রোগী উপকৃত হবেন।”
চট্টগ্রাম কিডনি ফাউন্ডেশনের সভাপতি ডা. মঈনুল ইসলাম মাহমুদের সভাপতিত্বে আয়োজিত এ অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন চট্টগ্রাম মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চ্যান্সেলর অধ্যাপক ডা. ওমর ফারুক ইউসুফ, আমির হুমায়ুন মাহমুদ চৌধুরী, অধ্যাপক ডা. ইমরান বিন ইউনুস, ইঞ্জিনিয়ার কামালুর রহমান, পিএইচপি ফ্যামিলির পরিচালক জহিরুল ইসলাম রিংকু, রিজোয়ান শহিদী, এমদাদুল আজিজ চৌধুরী, অধ্যাপক ডা. এম এ কাসেম, মোহাম্মদ শাহাজান, ইঞ্জিনিয়ার মতিউর রহমান, কহিনুর কামাল, চৌধুরী ফরিদ, ওমর আলী ফয়সাল, জেসমিন সুলতানা পারু, সাজ্জাদ মোহাম্মদ চৌধুরী, কর্নেল ইকবাল, পিডিজি এম এ আওয়াল, পিডিজিএফ খালেদা আওয়াল, পিডিজিএফ সামিনা ইসলাম, কমান্ডার এস এম আজিম উদ্দিন ও ডা. এম এ করিম।
অনুষ্ঠানে বক্তারা চট্টগ্রাম কিডনি ফাউন্ডেশনের কার্যক্রমের প্রশংসা করেন এবং ভবিষ্যতেও এর ধারাবাহিকতা অব্যাহত রাখার প্রত্যাশা ব্যক্ত করেন।
নতুন ফ্লোর ও অপারেশন থিয়েটার চালুর মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানটির সেবার পরিধি আরও বিস্তৃত হলো বলে মত প্রকাশ করেন সংশ্লিষ্টরা।
প্রসঙ্গত, বাংলাদেশে প্রায় ৩ কোটি ৮০ লাখ কিডনি রোগীর মধ্যে প্রতি বছর প্রায় ৪০ হাজার কিডনি রোগী ডায়ালাইসিসের ওপর নির্ভরশীল হয়।
শহর ও গ্রামাঞ্চলে সমানভাবে এই রোগ ছড়িয়ে পড়ছে। দারিদ্র্য, অসচেতনতা, চিকিৎসা সেবার অপ্রতুলতা এবং অস্বাস্থ্যকর জীবনযাপন এই সমস্যাকে আরও বাড়িয়ে তুলছে।
এছাড়াও দেশে প্রতি বছর প্রায় ৩০ হাজার রোগীর হঠাৎ কিডনি অকার্যকর হয়ে সাময়িক ডায়ালাইসিস প্রয়োজন হয়। এই রোগ আমাদের দেশের জন্য একটি অর্থনৈতিক ও স্বাস্থ্যগত সমস্যা।
পক্ষান্তরে, সবাই যদি কিডনি রোগের ব্যাপকতা, ভয়াবহতা, পরিণতি ও কারণ সম্পর্কে সচেতন থাকে এবং স্বাস্থ্য সম্মত জীবনযাপন করে তাহলে ৬০-৭০ ভাগ ক্ষেত্রে এই মরণঘাতী কিডনি অকার্যকর হওয়া প্রতিরোধ করা সম্ভব।